গল্পের মতো—শতাব্দী এষ

প্রথম প্রকাশঃ জুন ২, ২০১৫ সময়ঃ ৫:১১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৬:৪০ অপরাহ্ণ

l(1)মেয়েটা তাকে ভরা বর্ষার কথা মনে করিয়ে দেয় , সবুজ ধানক্ষেতের ওপর বৃষ্টির সমর্পন , সারা দিনব্যাপী মন কেমন করা । মেয়েটার  জন্য বেশিক্ষণ সময় নষ্ট করা যাবে না- এগিয়ে যেতে হবে, সব পুরানো স্মৃতি-চিন্তা-তত্ত্ব-দর্শন ছেড়ে অন্য কোনো দিকে – সকালে উঠেই জুতায় কালি করা তার বিশ্রী অভ্যাস। জুতা চকচকে করতে করতে যেন সকালের মুখে কালি মেখে যায় । কর্পোরেট লুক দামী হোয়া চাই। সকালের স্নিগ্ধতার সমস্ত সমীধ চুলায় যাক- বাস ধরতে হবে না হলে গুনে গুনে দুইশো টাকা সি এন জি ভাড়া । এইসব যানবাহন আসলে কোথায় নিয়ে যায়- আপাত গন্তব্যে পৌছানোই কী চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌছানোর মহড়া !

অনিমকে বেশ স্মার্ট লাগছে, সবকিছু  চকচকে, ফিটফাট । চা খেতে খেতে তার পত্রিকায় চোখ বুলানো দেখে মনে হতে পারে ছেলেটা কি গোছানো,ভদ্র,সৌম্য ! অনিম জানে, সে পত্রিকায় কিছুই পড়ে না, বিজ্ঞাপনও দেখে না, আশেপাশে কেউ না থাকলেই সে টুপ করে কাগজের গন্ধ নেয়, লোকে জানলে ধারণার বিপরীত ছকে তাকে ফেলবে। তাই তার সবকিছু পারফ্যাক্ট, স্বাভাবিক আর চকমকে আচরণের অভিনয়। এর ভেতরেও হয়তো রয়েছে অন্য কোনো গন্তব্যে পৌছানোর তাগিত, বেঁচে থাকতে কত কী করে গন্তব্যের ঠিকানা না-জানা মানুষ ।

পুরান আর নতুন ঢাকার ভেতর ঐতিহ্য আর আভিজাত্যের দ্বন্দ্বটা যেমন অনিমের দ্বান্দ্বিক সত্ত্বা অনেকটা তেমন । আগানোর তাড়না আর ক্লান্তি কিরকম বোঝা তাকে অনবরত কাটাছেঁড়া করে ।

চোখ বন্ধ করলেই একটা আকাশ বিকালের রোদ বুকে নিয়ে ডুবে যেতে থাকে সমুদ্র-তলায় ভাঙা জাহাজের মতো । এরকম একপাক্ষিক চিন্তা আর কথপোকথনের মানে নাই কোনো । কালের বিচিত্র অনুসঙ্গ হয়ে চেতনা তাকে জানান দেয়- তারপরও তোমার অস্তিত্বের মানে আছে গভীর, তুমিই দেখতে পারো প্রকৃতিকে এবং ভাবতে পারো প্রকৃতির অধিক কোনো কিছু ।

মেয়েটা মাঝে মাঝে তাকে আচ্ছন্ন করে আবার একই সাথে ঘোর ভেঙে দেয় । এই মেয়েটা কে- অনিম জানে না, জানতে চায়ও না । মেয়েটা তার কাছে কেবল বর্ষা হয়েই থাকুক, একটা নরম ছায়া হয়ে থাকুক, অস্তিত্বের চারপাশে ।

 ফাইলের পর ফাইল জমছে টেবিলের ওপর, আবুল হাসানের কবিতা চাপা প’রে রয়- পাথরের বুকে লাবন্য ধরে নিয়ে । অনিম ক্লান্ত হতে চায় না, যদিও সেই পাথর তার প্রিয় তারপরও এখন ফাইলগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ন ।

মায়ের কাছে কতকাল আগে শোনা- কলেরায় গ্রাম উজার হবার গল্প এবং গল্পের ভেতর গল্পের চিৎকার । জোর করে মাথা থেকে তাড়ায় সব । এখন ফাইলের সময়, কর্পোরেট সময়, অপটিক্যাল মাউসের সময়- এখানে কলেরা নাই, অথবা নাই তিশির ফুলের মতো  নীল নীল  মায়ের গল্প বলা চোখ । 

শ্বেতা শতাব্দী এষ    
বাংলা বিভাগ,  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G